চ্যানেল ২৪-এ বিতর্কিত প্রতিবেদন: আওয়ামী লীগের প্রবাসী সরকার গঠন
জেরিন হায়াত: ২১ অক্টোবর সোমবার দুপুরে বাংলাদেশের নিউজভিত্তিক চ্যানেল ২৪ এ একটি বিশেষ নিউজ বিশেষ গুরুত্ব সহকারে সম্প্রচারিত হয়। শিরোনাম, ভারতের মাটিতে প্রবাসী সরকার গঠনের পাঁয়তারা করছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। অথচ ৫ ঘন্টা পর নিউজটি ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলে চ্যানেলটি । ভিডিও প্রাইভেট করা এখন। তবে লাইভে থাকা সম্পূর্ণ নিউজ বুলেটিনে এখনো দেখা যাচ্ছে নিউজটি।
প্রতিবেদনটি দেখে প্রথমেই প্রশ্ন আসে, কি দিয়ে প্রতিবেদক তার বক্তব্য এসটাবলিশড করলো? কার ইন্টারভিউ বা বক্তব্য প্রচারিত হল?
চেহারা দেখা যায় না। বিশাল কালো মুখোশ পরা এক লোকের পরিচয় দেয়া হলো শেখ পরিবারের সদস্য "শেখ রুবেল"। সে কে? সাংবাদিকতার গ্রামার আর এথিকস কি বলে? আসুন দেখি।
লোকটা কে? তার পরিচয় রিপোর্টার নিশ্চিত নন। এমন কালো মাস্ক পরে ভিডিও বার্তা দিতে দেখা গেছে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়দা বা হিজবুল্লাহ নেতাদের। যারা চেহারা দেখালে সমস্যা ছিল। আওয়ামী লীগ কি এখনো পর্যন্ত নিষিদ্ধ হয়েছে? বা আন্তর্জাতিক ভাবে সন্ত্রাসী তকমা পেয়েছে? অথচ চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের সিনিয়র রিপোর্টার জুনায়েদ শাহরিয়ার বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তির নাম পরিচয় জানালেন, ভয়েস শোনালেন কিন্তু চেহারা মাস্কে ঢাকা।
শেখ রুবেল যদি শেখ ফ্যামিলির খালাতো, মামাতো কেউ হয়েও থাকে তার বক্তব্যের ফায়দা কি? সে কি বিগত সরকারের বা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কেউ? প্রতিবেদন আর গল্পের পার্থক্য এই নিউজভিত্তিক চ্যানেল বোঝে না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই চ্যানেল অতীতে প্রচুর ব্রেকিং ও স্কুপ নিউজ দিয়েছে যা বিগত সরকার ও আইন বিভাগের বিতর্কিত নানা কর্মকান্ডকে দর্শকের সামনে তুলে ধরেছে।
রাজনীতির এমন এক টালমাটাল পরিস্থিতিতে কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়া কিভাবে এমন প্রতিবেদন প্রচার করা হলো? এ বিষয়ে চ্যানেল টুয়েন্টিফোর কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে প্রতিবেদক তার সহকর্মীদেরকে জানিয়েছেন, বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তি শেখ রুবেল নন। যা পরে জানতে পারেন তিনি।
সবচেয়ে বড় কথা ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল প্রবাসী সরকার গঠন করবে আর ভারত তা মেনে নেবে? এ নিয়ে ভারত সরকারের কোনো বক্তব্য নেবার চেষ্টাও করেনি প্রতিবেদক জুনায়েদ শাহরিয়ার।
৫ ঘন্টা পরে কোনো রকম ব্যাখ্যা বা দু:খ প্রকাশ না করেই নিউজটি প্রত্যাহার করে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া না গেলেও নিউজরুমের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবেদনে যে ব্যক্তি বক্তব্য দিয়েছে সে শেখ রুবেল নয়।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। নিউজটি নিয়ে ঝড় ওঠে রাজনৈতিক মহলে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী ও আওয়ামী বিরধী বলয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
উল্লেখ্য, যে দিন প্রতিবেদনটি প্রচার হয় সেদিন কাছাকাছি সময়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা কুমিল্লায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। আওয়ামী লীগ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় প্রবাসী সরকার ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়কও একই দাবি করে জানান, ওই সমাবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখতে পারেন বলে তথ্য রয়েছে।
তবে আগরতলায় সমাবেশ, প্রবাসী সরকার গঠন ও শেখ হাসিনার উপস্থিতির যে তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে যার কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। একাধিক শীর্ষ নেতার সাথে কথা বলেও এ বিষয়ে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে ভারত সরকারও বলছে - এ দাবির কোনো ভিত্তি নেই। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল কেউ এখনও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের দাবি, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং ফেনী অঞ্চলের যেসব আওয়ামী নেতারা এখনও দেশে অবস্থান করছেন, তারাই ওই সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন। ত্রিপুরায় আওয়ামী লীগের এমন তৎপরতার তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা প্রতিহতের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লার পক্ষ থেকে এ ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর টাউন হল মাঠ থেকে মশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলের নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও আবদুল হান্নান মাসুদ।
কিন্তু এমন তথ্য তারা কোথায় পেলেন, ‘জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, আমাদের নিজস্ব কানেকশনের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি।’
এখন এই প্রতিবেদক জুনায়েদ এর সোর্স এবং উদ্দেশ্য নিয়ে খালি প্রশ্ন তোলাই যথেষ্ট নয়। এমন শীর্ষ নিউজ চ্যানেলের কর্তাব্যক্তিদের উদ্দেশ্য ও গেইট কিপিং নিয়েও প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। কারন, গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে অস্থিতিশীলতা তৈরি ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকার বাংলাদেশ ও বিশ্বে নতুন নয়। আর এর পিছনে আর্থিক লেনদেনসহ বহু অনৈতিকতার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য এই প্রতিবেদক জুনায়েদ শাহরিয়ার ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতা/ মন্ত্রিরা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ৯ আগস্ট শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভার্চুয়াল ইন্টারভিউ প্রচার করে। কিন্তু সেই ইন্টারভিউটিও জুনায়েদের নেয়া নয় বরং দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকনের মাধ্যমে রেকর্ড ও সরবরাহ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে।
-
Previous Post
কেন আত্মহত্যা করতে হল সীমান্ত খোকনকে?
-
Next Post
সাকিবের বিপক্ষে পোস্ট দেয়ায় হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ
আপনারও পছন্দ হতে পারে<

চ্যানেল ২৪-এ বিতর্কিত প্রতিবেদন: আওয়ামী লীগের প্রবাসী সরকার গঠন
প্রতিবেদনটি দেখে প্রথমেই প্রশ্ন আসে, কি দিয়ে প্রতিবেদক তার বক্তব্য এসটাবলিশড করলো? কার ইন্টারভিউ বা বক্তব্য প্রচারিত হল?

কেন আত্মহত্যা করতে হল সীমান্ত খোকনকে?
সীমান্ত খোকন জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দামিহা ইউনিয়নে।
Two Comments