ফরহাদ হোসাইন: আমরা সবাই জানি হাসিনার আমলে একটি ইস্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নতুন একটি ইস্যু তৈরি করা হতো। এই ইস্যু কারা তৈরি করতো? ইস্যু তৈরি করতো ডিবি হারুন, সিটিটিসির মনিরুল ইসলামসহ আরো অনেকে। ইস্যু তৈরির জন্য জঙ্গি নাটকসহ বিভিন্ন ধরনের ঘটনা তৈরি করা হতো অথবা ছোট একটি ঘটনাকে রং লাগিয়ে বড় করে দেখানো হতো। হাসিনার অন্যতম ইস্যু মেকার ছিলেন চ্যানেল ২৪ এর সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল ইমরান।

কে এই আব্দুল্লাহ আল ইমরান? হাসিনার বাবাকে নিজ হাতে গুলি করা নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে ফেরত আনার গুরুদায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নেওয়া ব্যক্তিই আব্দুল্লাহ আল ইমরান।

আব্দুল্লাহ আল ইমরানের উদ্যোগে নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানের লক্ষ্যে সিবিসিতে ২০২৩ সালের ১৮ই নভেম্বর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিবেদনে খুনী হাসিনা, বর্তমানে কারাবন্দী আনিসুল হক এবং তৎকালীন সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।(https://shorturl.at/Rsri0) হাসিনার ফ্যাসিবাদের অন্যতম স্টেকহোল্ডারের উদ্যোগে করা এই খবর তখন দেশের প্রতিটি মিডিয়ায় ঢালাওভাবে প্রচারিত হয়। (https://shorturl.at/vTjFS) (https://shorturl.at/yQjSz) (https://shorturl.at/VrvVr) ২৭ শে সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ দৈনিক সমকালে "শেখের বেটি থেকে শেখ হাসিনা" শিরোনামে একটি আর্টিকেল লেখেন আব্দুল্লাহ আল ইমরান। এই আর্টিকেলে তার হাসিনা বন্দনা ফুটে ওঠে। (https://shorturl.at/98Vby)

ইমরান ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে "বিসিএস ও বাদ গেল না" শিরোনামে বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁস বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেন৷(https://tinyurl.com/msm6xzud) কোটা আন্দোলনের শুরুর দিকে আন্দোলনের ইস্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বিসিএসের পুরাতন ইস্যুটি নতুন করে সবার সামনে আনেন। এভাবে হাসিনার আমলে বিভিন্ন সময় ইস্যু তৈরি করেছেন, অন্য ইস্যু ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পুরাতন ইস্যুকে সামনে এনেছেন। তিনি ইস্যু তৈরির কাজে দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিআইডি, ডিবি) ব্যবহার করতেন। 

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ইমরান ইতোমধ্যে ৬ টি উপন্যাস লিখেছেন। লেখকস্বত্তা থাকায় যেকোনো ইস্যুকে নিখুতভাবে উপস্থাপন করতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী। ইমরানের করা অনুসন্ধানে ঢাবি প্রশ্নফাঁস মামলার রায় হয়েছে কিছু দিন আগে। রায়ে ১০ জনের সাজা হলেও ১১৪ জনকে খালাস দেন আদালত।(https://tinyurl.com/yc8nh64m) ১১৪ জন নিরাপরাধ মানুষকে কেনো ফাঁসানো হয়েছিল প্রশ্ন ফাঁস ইস্যুতে? ফ্যাসিস্ট বিরোধী এবং আওয়ামীলীগে থাকা হাসিনা বিরোধী অনেক ব্যক্তিকে ফাঁসিয়েছেন তার ইস্যু তৈরির কাজে।  

এছাড়াও তাদের উদ্দেশ্য ছিল চাঁদাবাজি। খুলনার ডা. তারিম ইতোমধ্যে ইমরানের চক্রের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন৷ (https://tinyurl.com/yc3hnx6j)

চলতি মাসে মেডিকোর কর্ণধার ডা. জুবাইদুর রহমান জনি সংবাদ সম্মেলন করে ইমরানের চক্রের বিরুদ্ধে ৪ কোটি টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন এবং মামলা করেছেন।

(https://tinyurl.com/mtap9ywy)

কোটা আন্দোলনের সময় "তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার" শ্লোগানের বিরোধিতা করে ফেসবুকে পোস্ট দেন এই ইমরান। আন্দোলনকারীরা তার এই পোস্টের বিরোধিতা করায় পূর্বের পোস্ট ডিলেট করে আবু সাইদকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দেন। হাসিনা পালানোর পর সবার থেকে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা পেয়ে গর্তে লুকান তিনি এবং তার ফেসবুকের সকল পোস্ট সবার থেকে হাইড করেন। একটি পোস্ট দিয়ে জানান তিনি বিসিএস এর বিষয়ে আর কোনো কাজ করবেন না (শত শত ইমেইল শিরোনামের ফেসবুক পোস্ট ইতোমধ্যেই ডিলেট করে দিয়েছেন তিনি)। উনার কাছে থাকা সকল তথ্য উপাত্ত চ্যানেল ২৪ কে দিবেন। চ্যানেল ২৪ এর সার্চলাইট এই বিষয়ে কাজ করবে। কিন্তু ইমরান হঠাৎ করে এমাস থেকে সরব হয়েছেন পিএসএসি প্রশ্নফাঁস ইস্যুতে।

ইমরান নিজের ফেসবুক পোস্টে পিএসসির একজনের স্বীকারোক্তির ভিডিও পোস্ট করেছেন। রহস্যজনক ভাবে ভিডিওটির ১১ সেকেন্ডে ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন হয়ে যায়। (https://tinyurl.com/3rk6xez5)

ইমরান চাঁদাবাজির টাকায় ফেসবুকে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বট বাহিনী। ২ দিন আগে ফেসবুকে ভিডিও বার্তা দিয়ে বলেছেন পিএসসি সংস্কারে অবদান রাখতে পারবেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি যখন "বিসিএস ও বাদ গেল না" প্রতিবেদন করেছিলেন তখন কি পিএসসি সংস্কারের কথা মনে হয়নি? হাসিনার বাবার খুনীকে কানাডা থেকে ফিরিয়ে আনার গুরুদায়িত্ব নিয়েছিলেন ইমরান; আবু সাইদ, মুগ্ধের খুনী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার গুরুদায়িত্বটা নিবেন কি?

BDMM/FH