Investigation

সময় টিভি হয়ে উঠেছে 'মেক্সিকো রুট'

আমেরিকা-কানাডা অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য যে পথ ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় 'মেক্সিকো রুট'। ঠিক একইভাবে সময় টিভির সাংবাদিকদের জন্যও স্টেশনটি হয়ে উঠেছে সেই 'মেক্সিকো রুট'। প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবহার করে একাধিক সংবাদকর্মী বিদেশে অবৈধভাবে পালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সংবাদ কাভার করতে প্রতি বছর বহু সাংবাদিক আমেরিকাতে পাড়ি জমান, এদের একটা অংশ আর ফিরে আসে না। এটা অনেক পুরাতন খবর। এই জায়গা থেকে বেশ খানিকটা ভিন্ন ছিল সময় টেলিভিশন। সাধারণত এসব প্রোগ্রাম তারা কাভার করাতো তাদের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান সাকীকে দিয়ে। কিন্তু এবার ঢাকা থেকেও তিন জন সংবাদকর্মী প্রেরণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। হঠাৎ প্রতিষ্ঠানটি এই অধিবেশন নিয়ে সিরিয়াস কেন তা জানতে , এদের সংবাদগুলোতে নজর দেই। সংবাদে আমরা দেখতে পাই , বেশিরভাগ লাইভ এবং সংবাদ দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান সাকী। এছাড়াও আহমেদ সালেহিনকেও সংবাদ দিতে দেখা গেছে। কিন্তু এই অধিবেশনে যাওয়া আরও দুই সংবাদকর্মী মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান ওরফে রাশেদ বাপ্পি ও নুবাইয়া তাজরিন ওরফে তাজরিন রিকার কোন সংবাদ আমরা পাইনি। এই বিষয়ে আমরা সময় টিভির বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী ও কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করি। তারা কেউই বাংলাদেশ মিডিয়া মনিটরকে অফিসিয়াল কোন বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার বেশ কিছু তথ্য আমাদের জানিয়েছেন। এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, রাশেদ বাপ্পি ও তাজরিন রিকা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। তারা আর ফিরে আসবে না পালিয়ে যাবার জন্যই ওখানে গিয়েছেন বলে অফিসে এখন সবাই তাই জানে। এ বিষয়ে আরেক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের আসলে কি করার আছে! ৫ তারিখের পর থেকেই অফিসে একটা বাজে পরিস্থিতি চলছিলো। এই সুযোগ নিয়ে এরা তিন জনই গেছে। এদের সব কাগজ-পত্র অফিস থেকে দেয়া হলেও, এখন অফিস এটা নিয়ে বিপাকে। অফিস থেকে তাদেরকে ফোন দিয়ে ফিরে আসার জন্য অনুরোধও করা হচ্ছে। কারণ এরা পালিয়ে গেলে অফিসের উপরের অনেক কর্মকর্তাই বিপদে পড়বেন। কেন বিপদে পড়বেন জানতে চাইলে বলা হয়, তাদের যারা এনওসি দিয়েছে তারা যে পালিয়ে যাবার বিষয়টি জানতেন তা এখন অফিসের সবাই জেনে গেছে। শুধু তাই নয়, এরা যদি ওখানে কিছু করতে না পারে তাহলে ফিরে এসে আবার যোগদান করবেন এই কথাও দিয়ে গেছেন এসকল কর্মকর্তাদের। এমন আরও একজন ছুটিতে কানাডাতে গিয়ে থেকে যাবার চেষ্টা করছেন,নাম তার রাশেদ লিমন। তিনিও কিছু না করতে পারলে ফিরে এসে সময়তে যোগ দিবেন বলে সিনিয়রদের জানিয়েছেন। এই তিন সংবাদকর্মীর সফরের খরচ প্রতিষ্ঠান ব্যয় করছে কিনা জানতে চাইলে আরেকজন অফিসিয়াল নিশ্চিত করছেন, অফিস কোন খরচই বহন করছে না। এরা নিজেদের খরচই এই অধিবেশনে গেছে। আসলে অফিসের ওখানে কোন সংবাদকর্মী পাঠানোর দরকারই নেই, কারণ যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি এই কাজের জন্য যথেষ্ট সামার্থবান রয়েছে। কাজেই বুঝেই নিন, এরা অফিসের প্রয়োজনে নাকি নিজেদের প্রয়োজনেই গেছেন। আমরা এরপর অনুসন্ধান শুরু করি যুক্তরাষ্ট্রে। আমারা খুঁজে পাই দুইটি আলাদা আলদা ছবি। দুইটা ছবিতেই কমন ছিল এখন টিভির দূর্নীতিবাজ ও প্রচুর অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়া মাহমুদ রাকিব। একটি ছবিতে মাহমুদ রাকিবের সাথে দেখা যায় রাশেদ বাপ্পি ও তাজরিন রিকাকে। তাদের গলায় ছিল অধিবেশনের এক্রডিয়েশন কার্ড। এছাড়াও ছবিতে ছিল ধর্ষণের অভিযোগ মাথায় নিয়ে দেশ থেকে চলে যাওয়া এখন টিভির সাবেক রিপোর্টার এহসান জুয়েল ও জুয়েলের প্রথম স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ থাকা দ্বিতীয় স্ত্রী তাহিয়া রুবাইয়েত অপলাও। যাদের দুই জনকেই আমেরিকাতে পূনর্বাসন করেছে টিবিএন২৪ নামে অ্যামেরিকাভিত্তিক একটি বাংলা অনলাইন সংবাদমাধ্যম। এছাড়া আরেকটা ছবিতে রাকিবের সাথে দেখা গেছে আহমেদ সালেহিনকে। সেই একই ছবিতে দেখা গেছে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক কর্মচারীর ভাই ও তরুণকন্ঠ নামে একটা পত্রিকার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শান্তকেও। যিনি এর আগের দুইবার ভিসা না পেলেও এবার পেয়েছেন। তবে তার ফিরে আসা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দুই জন সিনিয়র সাংবাদিক। দুই ছবিতেই কমন ছিলেন প্রচন্ড দূর্নীতিবাজ মাহমুদ রাকিব। আমাদের সূত্র বলছে, মূলত এই অবৈধ 'আদমদের' আমেরিকাতে 'স্যাটেল' করার কাজটা রাকিবই করেন। কখনও 'ভালোবেসে' আবার কখনও মোটা অর্থের বিনিময়ে। এসব কারণেই কিছুদিন পরপর একা অথবা পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে যান মাহমুদ রাকিব। এছাড়াও আমাদের সাথে এমন দুই জনের কথা হয়েছে যাদের সাথে রাকিব ও রাশেদ বাপ্পি যোগাযোগ করেছিলেন । তারা দুই জনই বাংলাদেশ মিডিয়া মনিটরকে নিশ্চিত করেছেন, এখানে থাকার প্ল্যানের পাশাপাশি কিভাবে বিজনেস বা চাকরি করা যায় সে বিষয়ে খোঁজ ও সাহায্য চেয়েছে। আমরা এসব নিয়ে কথা বলি আহমেদ সালেহিনের সাথে। কেন একাধিক সাংবাদিক গেলেন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতিসংঘের এতবড় ইভেন্টে একাধিক সাংবাদিক আসবে বা কাভার করবে সেটাই স্বাভাবিক। তার চেয়ে বড় কথা সময় টেলিভিশনে নিউজ কাভার ও সবার আগে সব খবর দেয়ার ক্ষেত্রে সবার উপরেই আছে এখনও। অফিস বরাবরই ইভেন্টকে গুরুত্ব দিয়ে সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। নিজ খরচে যাওয়া নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত ও অফিসের বিষয়ে কোন কথা বলা ঠিক হবেনা আমার অবস্থান থেকে। অফিস এনওসি ও অ্যাসাইনমেন্ট না দিলে আমরা কোথাও যাইনা, এখানে এসেও অ্যাসাইনমেন্টই করছি। একইভাবে আমরা রাশেদ বাপ্পির সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করি। তাকে আমরা হোয়াটোসআপে ম্যাসেজ করি। তিনি আমাদের ম্যাসেজ সিন করলেও, কোন উত্তর দেননি। এদিকে এসব জেনে-শুনেও অফিস যখন এদেরকে এনওসি দিয়েছে তার মানে প্রতিষ্ঠান তাদের পেশাদারিত্ব ধরে রাখতে পারেনি। আর সত্যিই যদি এরা ফিরে না আসে তবে এর প্রভাব ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সকল গণমাধ্যমের উপরও পড়তে পারে। যদিও সব জেনেও অনুমতি দেয়াটাও একতা অপরাধের মধ্যে পড়ে বলেই মনে করেন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা।
  • Previous Post

    সিএনই জাহিদের অপেশাদারিত্ব: এসএ টিভির পতনের কালো অধ্যায়

Two Comments

আপনারও পছন্দ হতে পারে<

হাসিনার ইস্যু মেকার চ্যানেল ২৪ এর ইমরান

কে এই আব্দুল্লাহ আল ইমরান? হাসিনার বাবাকে নিজ হাতে গুলি করা নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে ফেরত আনার গুরুদায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নেওয়া ব্যক্তিই আব্দুল্লাহ আল ইমরান।

মতামত দিন