Fact

বিটিভিতে দূর্নীতির বাম্পার ফলন

জাওয়াদ নির্ঝর: বিটিভি- সরকারি টেলিভিশন। ট্রল করে মানুষ বিটিভিকে ডাকে বাতাবি লেবু টেলিভিশন। বাতাবি লেবুর এই বাম্পার ফলন দেখানোর আড়ালে জনগনের কোটি কোটি টাকা লোপাট করছে বিটিভির কর্মকর্তারা। লোপাট বললে ভুল হবে! যে যার মত করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের মৎতসবে নেমেছে। রাষ্ট্রীয় এই টেলিভিশনটি চলে জনগনের টাকায়। আপনি সবশেষ কবে বিটিভি দেখেছেন তা মনে করতে পারবেন না। অথচ দর্শককে বস্তাপচা অনুষ্ঠান দেখানোর নামে বাজারমূল্য বা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে তিন গুন চারগুন বা তারচেয়েও বেশি অর্থ খরচ দিয়ে এসব অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। অর্থ লোপাটের এক নিরাপদ রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই গণমাধ্যমটি। প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার, পরিচালক,প্রৌকোশলীদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতি অভিযোগ উঠেছে বা আছে। কথায় আছে,সরকারি মাল দরিয়াতে ঢাল। বিটিভির অবস্থাও সেই সরকারি মালের মত হয়েছে। বিটিভির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কেনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। নানা অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা দুর্নীতির কারণে বিটিভির অবস্থা কেমন হয়ে দাড়িয়েছে সেটির আর আলোচনার দরকার পড়ে না। আপাদমস্তক দুর্নীতিতে জড়িত বিটিভি ভবণে দুদকও হানা দিয়েছে। একজন দুজন নয়। প্রায় সবাই দুর্নীতি করেন। তাই খুললাম খুললাম দুর্নীতিতে জড়িয়ে এখন তারা ভয়ডরহীন। দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াতো দূরে থাক, আত্মসাতের টাকা ফেরত না দিয়ে বহাল তবিয়াতে প্রতিদিন অর্থ লোপাট করছে। এমন ঘটনাও আছে। বিটিভির অনুষ্ঠান এবং পরিকল্পনা পরিচালক জগদীশ চন্দ্র এষ ২০১৮ সালে বিটিভিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। শিল্পীদের সম্মানী ভাতা, গবেষণা এবং রয়েলিটি বাবদ বড় অংকের অর্থ লোপাট করেন জগদীশ। ৫ বছরে কোটি কোটি টাকা নয়-ছয় করেছেন তিনি। বিটিভির তদন্ত কমিটি একটিমাত্র সুনির্দিষ্ট অভিযোগের শাস্তি স্বরুপ জগদীশ চন্দ্র এষকে ১০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে বলে। এই অর্থ জগদীশ লোপাট করেছিলেন।এতদিন হয়ে গেলেও জগদীশ সেই টাকা ফেরত দেননি। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার পরেও কোন ব্যবস্থা না নিয়ে জগদীশের চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে। জগদীশের দাবি, তিনি একা দুর্নীতি করেন না। দেশের সরকারি টেলিভিশন হলেও সবচেয়ে বাজে অনুষ্ঠান,সংবাদ প্রচার,সবকিছু মিলিয়ে বিটিভির অবস্থা খুবই করুন। দর্শক বিটিভি দেখেন কিনা সেটাও তর্কে যাওয়ারো প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রীয় অর্থায়নের এই টেলিভিশনটি চলে জনগনের টাকায়। বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলন দেখানো বিটিভির কোন মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান না থাকলেও বস্তাপচা অনুষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকা ঠিকই লোপাট করা হচ্ছে। করাপশন ইন মিডিয়ার হাতে আসা বিটিভির কয়েকটি অনুষ্ঠানের মাসিক খরচ দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি। জনগনের টাকা এভাবে লোপাট হচ্ছে,অথচ কেউ দেখছে না। সাপ্তাহিক একটি নাটকের জন্য চার লাখ টাকা। অথচ দেড় থেকে দুই লাখ টাকা খুব ভালো মানের এ ক্যাটাগরির নাটক পাওয়া যায়। এছাড়াও ধারাবাহিক নাটকের একটি পর্বের খরচ বাবদ ১ লাখ আশি হাজার। মাত্র ১২ টি অনুষ্ঠানের জন্য মাসে কোটি টাকার উপরে খরচ। একটি টকশোর এক এপিসোডের খরচ ৫৭ হাজার টাকা। হিরামন নামের এই ধারাবাহিক নাটকটির প্রতি পর্বে খরচ দেখানো হয়েছে, ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর মাসে ৪৭ লাখ! জনগণের টাকা যেনো বিটিভির কাছে গাছের পাতা। অথচ, এই একই ধরণের অনুষ্ঠান,টকশো স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো অর্ধেকেরও কম খরচে থার্ড পার্টি প্রডাকশন থেকে ক্রয় করে। সেখানে নিজস্ব স্টুডিও, ক্যামেরা সেটআপ থাকাসহ অন্য লজিস্টিক সুবিধার কারণে বিটিভির খরচ আরো কম হওয়ার কথা। বিটিভির অনুষ্ঠানের মান স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর ধারে কাছেও না। একটি টকশো করতে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো গড়ে খরচ যেখানে সর্বোচ্চ ১০-১৫ হাজার সেখানে বিটিভি খরচ দেখায় ৩৮ হাজার। মানের বিচারে বিটিভির টকশো দেশের ডি গ্রেডের টেলিভিশনগুলোর চেয়েও নিম্নমানের। এরমধ্যেই বিটিভি সংলাপ,স্বাস্থ্য জিজ্ঞাসা, খবর প্রতিদিন, বাংলাদেশের হৃদয় হতে সহ সবগুলো অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন দূর্নীতিবাজ জগদীষ। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে যে এসব বস্তা পচা অনুষ্ঠানগুলো বিটিভির পর্দায় প্রচার করা হয়,সেগুলোর মানও একদম নিম্ন ক্যাটাগরির। তারপরও কেনো এতা টাকা খরচ হয়। কাদের জন্য অস্বাভাবিক বিল করা হয়! নিম্নমানের অনুষ্ঠান তৈরি করে তিন বা চারগুন অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ব্যাপারে জগদীশের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং নিয়মিত তালিকার তার সকল অনুষ্ঠান প্রচারের আড়ালে লাখ লাখ টাকা পকেটে ঢোকানো হয়েছে সকল নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে।
  • Previous Post

    গ্রিন টিভি থেকে রফিকুল ইসলামকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু

Two Comments

আপনারও পছন্দ হতে পারে<

চ্যানেল ২৪-এ বিতর্কিত প্রতিবেদন: আওয়ামী লীগের প্রবাসী সরকার গঠন

প্রতিবেদনটি দেখে প্রথমেই প্রশ্ন আসে, কি দিয়ে প্রতিবেদক তার বক্তব্য এসটাবলিশড করলো? কার ইন্টারভিউ বা বক্তব্য প্রচারিত হল?

কেন আত্মহত্যা করতে হল সীমান্ত খোকনকে?

সীমান্ত খোকন জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দামিহা ইউনিয়নে।

মতামত দিন