Statement

বিবৃতি: গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ এবং রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতা

বাংলাদেশ মিডিয়া মনিটর গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার-এর কার্যালয়সমূহের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ, ভাঙচুর এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল এবং রাজধানী ঢাকায় এই পত্রিকা দুটির কার্যালয়ে হামলা ও বিক্ষোভের ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর একটি সরাসরি আঘাত। এই ধরনের আক্রমণ শুধু গণতান্ত্রিক পরিবেশকে ব্যাহত করে না, বরং নাগরিকদের তথ্য জানার অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলে।  


প্রথম আলোর রাজশাহী কার্যালয়ের সামনে হামলা চালিয়ে সাইনবোর্ড ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা সন্ত্রাসী আচরণের পরিচায়ক। চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় এর আগে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষ ও হামলার চেষ্টাগুলোও অত্যন্ত নিন্দনীয়। বিশেষ করে, রাজধানীর কাওরান বাজারে প্রগতি ভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ এই ধরনের ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।  


আমরা এই ধরনের ধারাবাহিক আক্রমণকে একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করছি, যা দেশের স্বাধীন গণমাধ্যমকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আক্রমণ এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক নীতির বিরুদ্ধে।  


 রাষ্ট্রের ভূমিকা এবং দায়িত্বহীনতা


গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু, এই ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা এবং রাষ্ট্রের নীরবতা অত্যন্ত হতাশাজনক। এ ধরনের হামলার ঘটনাগুলো বারবার সংঘটিত হওয়া সত্ত্বেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।  


গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণকে উপেক্ষা করা মানে জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া। একটি স্বাধীন গণমাধ্যমই পারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে এবং নাগরিকদের সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে। রাষ্ট্র যদি এই আক্রমণ প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়, তবে তা কেবল গণমাধ্যম নয়, দেশের গণতন্ত্রকেও চরম সংকটে ফেলে দেবে।  


দাবি এবং আহ্বান


বাংলাদেশ মিডিয়া মনিটর নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে:


হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার: রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের কার্যালয়গুলোর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।  

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা: সাংবাদিকদের কাজের সুরক্ষা এবং তাদের ওপর আক্রমণের ঘটনা বন্ধে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।  

গণমাধ্যমের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব: সরকারকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং কোনো পক্ষের চাপে গণমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়ন চালানো বন্ধ করতে হবে।  

জনগণের তথ্য অধিকার রক্ষা: গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনগণের তথ্য জানার অধিকার রক্ষা করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব।  


বাংলাদেশ মিডিয়া মনিটর বিশ্বাস করে, একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি স্বাধীন ও নিরাপদ গণমাধ্যম অপরিহার্য। রাষ্ট্রের ব্যর্থতা এবং এ ধরনের আক্রমণ যদি অব্যাহত থাকে, তবে এটি দেশের উন্নয়ন এবং সুশাসনের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। 


আমরা দেশব্যাপী সকল গণমাধ্যমকর্মী ও স্বাধীন মত প্রকাশের পক্ষে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি সংহতি জানাই এবং এই সঙ্কট মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই।  


বিবৃতি/বিএমএম


  • Previous Post

    শেখ হাসিনার স্নেহের অভির ভয়ংকর অর্থ কেলেঙ্কারি

Two Comments

আপনারও পছন্দ হতে পারে<

মতামত দিন