একসময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এসএ টিভির সুনাম ও দর্শকপ্রিয়তা দ্রুতই নিম্নমুখী হয়েছে। এই পতনের কেন্দ্রে রয়েছেন চ্যানেলের চীফ নিউজ এডিটর (সিএনই) জাহিদুর রহমান খান। বর্তমান ও সাবেক সহকর্মীদের অভিযোগ অনুযায়ী, তার রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি, ঘোস্টরাইটিং, বিতর্কিত অতিথি নির্বাচন, এবং নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে চ্যানেলটির ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো কিভাবে এসব কর্মকাণ্ড এসএ টিভিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে।
জাহিদুর রহমান খান শেখ সেলিমের পিএস পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক কমিটি এবং মনোনয়ন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশের পোস্টিং, সরকারি টেন্ডার পাওয়ার তদবির করাসহ নানা রাজনৈতিক কাজে তার প্রভাব বিস্তার শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারি সুবিধা আদায়ের জন্য টকশোগুলোকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচারণা চালিয়েছেন। টকশোতে বিতর্কিত ও ভুঁইফোঁড় আলোচকদের আনার জন্য তিনি আর্থিক লেনদেন করতেন, যা চ্যানেলের পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
জাহিদ মাত্র এক বছরের মধ্যে তিনবার প্রমোশন পেয়ে সহকারী নিউজ এডিটর থেকে চীফ নিউজ এডিটর হয়ে যান। তার এই প্রমোশনের পেছনে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তাদের সুপারিশ এবং এসএ টিভির মালিক সালাউদ্দিন আহমেদের ওপর শেখ সেলিমের ফোনে চাপ সৃষ্টি করার বিষয়টি উঠে আসে। দুবার তাকে চাকরিচ্যুত করার চেষ্টা করা হলেও রাজনৈতিক চাপের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এই পদোন্নতি এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সহযোগিতা চ্যানেলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
জাহিদুর রহমান খান শুধু রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না; তিনি টকশোর গেস্টদের সাথে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বাণিজ্যও করেছেন। বিতর্কিত ও বিতর্ক সৃষ্টিকারী অতিথিদের টকশোতে এনে তিনি অর্থ উপার্জন করতেন। এ কারণে চ্যানেলের দর্শকপ্রিয়তা ক্রমশ হ্রাস পায়, এবং টকশোগুলোর পেশাগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
২০১৯ সালে এসএ টিভির তৎকালীন হেড অব নিউজ মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের উস্কে দেন জাহিদ। ফয়সালের নানা অনিয়ম থাকার ফলে জাহিদ সহজে অন্য কর্মীদের খেপিয়ে তোলে। ফলে ফয়সাল এর বিরুদ্ধে ও এসএ টিভি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে সাংবাদিক ও কর্মচারীরা। হেড অব নিউজকে শারিরীক লাঞ্চনা করে বের করে দেয়া ও এমডিকে অবরুদ্ধ করে রাখে ১৭ ঘন্টা। এই আন্দোলনের সময় তিনি টেলিভিশনের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করে ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় চ্যানেলটি বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন, যদিও শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয়।
ব্যর্থতার কারণ আরও অনুসন্ধান করতে গিয়ে এসএ টিভির মালিক সালাউদ্দিন আহমেদ এর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র আমাদের জানান , এসএ টিভির মালিক এর সাথে সেসময় সাংবাদিক নেতা শাবান মাহমুদ ও আবু জাফর সূর্য্য ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে আন্দোলনকে ধামাচাপা দিয়ে দেয়। কিন্তু জাহিদ একই সাথে আন্দোলনকারী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং মালিকপক্ষ তিন দিকেই সুসম্পর্ক রাখে ।

অভিযোগ রয়েছে, জাহিদুর রহমান খান নানা ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিতেন, তবে কাজ করতেন না। টাকাও ফেরত দিতেন না এবং দাবী করলে শেখ সেলিমের প্রভাব ব্যবহার করে পুলিশের মাধ্যমে হয়রানি করতেন। নিজের বিত্তবৈভব গোপন রাখার চেষ্টা করলেও, তার স্ত্রী ও শালীর নামে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও দামি গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে আমরা জাহিদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলেও তার পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এসএ টিভির পতনের পেছনে চীফ নিউজ এডিটর জাহিদুর রহমান খানের ভূমিকা স্পষ্ট। তার রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, টকশোতে দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ, এবং ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য টেলিভিশনের মূল দর্শনকে অবজ্ঞা করা এসএ টিভির জনপ্রিয়তাকে তলানিতে নিয়ে গেছে। বর্তমানে এই টেলিভিশনটি চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি, এবং এর প্রধান কারণ হলো জাহিদের দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয়।
Two Comments