Statement

প্রেস এক্সপ্রেসের পেছনের কারিগর শেখ মুবিন

শেখ হাসিনার আমলের প্রোপাগান্ডা মেশিনগুলো জনগণের সামনে চলে আসলেও, এখন পর্যন্ত গোপনেই রয়ে গেছে মাস্টারমাইন্ডরা। তবে স্বাধীনতা সাংবাদিক ফোরাম নিয়ে কাজ করার সময় আমাদের সামনে একের পর এক মাস্টারমাইন্ড আসতে থাকেন। মেজর আফিজুর রহমানের পর আমাদের সামনে এসেছে আরেক প্রোপাগান্ডা মেশিন শেখ মোহাম্মদ ফাওজুল মুবিন। শেখ মোহাম্মদ ফাওজুল মুবিন আওয়ামী লীগের প্রোপাগান্ডা দুনিয়াতে শেখ মুবিন নামেই বেশি পরিচিত। তাকে সহজে চেনার মাধ্যম হলো প্রেস এক্সপ্রেস নামের ওয়েবসাইট। গোয়েন্দাদের পরিচালিত প্রোপাগান্ডা নির্ভর এই ওয়েবসাইটের মালিক ছিলেন তিনি। ইসিবি চত্ত্বরের ওয়াসি টাওয়ারে ছিল প্রেস এক্সপ্রেস ও সেলট্রন নামের আরো একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস, যার মালিকও এই মুবিন।সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রেস এক্সপ্রেস বন্ধ হয়ে গেলেও মুবিনের প্রতিষ্ঠান সেলট্রনের নামে কক্সবাজারসহ এখনো বিভিন্ন জায়গায় প্রকল্প চলছে। শাকিল-রুপার ঘনিষ্ঠ মুবিনের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা না থাকলেও শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সবার কাছেই ছিল তার অবাধ যাতায়াত। পরিচয়ও দিতেন সাংবাদিক বলে। যেই কাজে তার সহযোগী ছিলেন একাত্তর টিভির শাকিল-রুপাসহ আরো অনেক সাংবাদিক। শাকিল-রুপারা তাকে শেখ হাসিনার কাছেও সাংবাদিক বলে পরিচয় করিয়ে দিতেন নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য। বিগত সরকারের আমলে যতগুলো প্রোপাগান্ডা ভিডিও তৈরি ও প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে, তারই প্রায় সবগুলোর পরিকল্পনা, স্ক্রিপ্ট হয়েছে তার অফিসে বসেই। সাংবাদিক না হলেও, সাংবাদিকদের গ্রুপ ছবিতেও নিয়মিত থাকতেন এই মুবিন। দেখা যেত ববি-পলকের সাথেও। এ ছাড়া প্রেস এক্সপ্রেসের নামে এই মুবিন কয়েক শ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এই অবৈধ প্রোপাগান্ডা প্রোজেক্টেও করেছেন লুটপাট। প্রেস এক্সপ্রেস প্রকাশের জন্য প্রিন্টিং প্রেসের সাথে সখ্যতা গড়ে খরচ দেখাতেন চার গুণ। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনা গোয়েন্দার একটি সূত্র বলেন, মুবিনের ওয়াহিদ ফিরোজ তন্ময় নামে এক খালাতো ভাই মাস দুই আগেই মালয়েশিয়া চলে আসে। পরিস্থতিতি বুঝতে পেরে হুন্ডি ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ডলার এই ভাই এর মাধ্যমে পাচার করে মুবিন। দেশটিতে রয়েছে মুবিনের সেকেন্ড হোমসহ বহু অবৈধ সম্পদ, যার দেখভাল করেন এই তন্ময়। সূত্রটি জানায়, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সমমানের একজন কর্মকর্তারও বিশাল অংকের টাকা মেরে দিয়েছে । যা আর ফেরত পায়নি এই কর্মকর্তা। এছাড়াও শেখ হাসিনার সাথে তোলা বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে, মানুষকে বোঝাতেন তিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ। আর এসব দেখিয়েই তিনি ইনভেস্ট নিতেন। যেই ইনভেস্টের টাকা ফেরত পেয়েছে এমন এক জনকেও আমরা খুঁজে পাইনি এখন পর্যন্ত। হাইটেক পার্কে প্রজেক্টের নাম করে বিভিন্ন এমপির থেকেও তিনি বিসাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। এছাড়াও আমাদের অনুসন্ধানে উঠে আসে, জামালপুরের সাংসদ মির্জা আজমের পোশ্য জামাইইয়ের কাছ থেকেও এই প্রোজেক্টের জন্য ৩০ লাখ টাকা নিয়ে আর ফেরত দেন নাই। ৩০ আখ টাকার বিপরীতে ৬০ লাখ ফেরত দেয়ার কথা ছিল মুবিনের। যার নথিপত্র আমাদের হাতে এসেছে। মুবিনের লুটপাটের ধরণ বলতে গিয়ে এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, অফিসটিতে দুর্নীতি ছিল অনেকটা ‘বালিশকাণ্ডের’ মতো। সেখানে একটি চেয়ার কেনার দাম দেখানো হতো ৩০ হাজার টাকা করে। এর বাইরেও বিতর্কিত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রচারনার জন্য সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে ১৫০ কোটি টাকা জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের দেওয়া হয়েছিল, তার দায়িত্বে ছিলেন সামরিক সচিব কবির আহমেদ। কবির আহমেদ এই দায়িত্ব প্রথমে দেন বহুল বিতর্কি সেনা কর্মকর্তা মেজর আফিজুর রহমানকে। পরে সেখানে মুবিনের নেতৃত্বে ভাগ বসান রুপা-শাকিল। পরে পুরো টাকা বন্টনের দায়িত্ব নিয়ে নেন মুবিন-রুপা-শাকিল। আর সেখান থেকেও বড় একটা অংশ নিজেদের পকেটে ভরেন এই তিন প্রোপাগান্ডা মেশিন।
  • Previous Post

    বাংলা ট্রিবিউনের কন্টেন্ট এনালাইসিস: পাকিস্তান বিতর্কে ইতিহাস বিকৃতি, ভারতের লাভ

Two Comments

আপনারও পছন্দ হতে পারে<

মতামত দিন