Statement

সন্তোষ-রাজনের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র

মুনওয়ার আলম নির্ঝর ও আয়াজ রাহমান: দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বহুদিন ধরেই ছিলেন বিভিন্ন এজেন্সির নজরদারিতে। তারপরও এর মাঝে গিয়ে তিনি ভারতে বিশেষ কারো সাথে দেখা করে আসেন অতি গোপনে। সেই গোপন বৈঠকের কথা তিনি নিজেই এক হিন্দু নেতাকে বলেন। যার কল রেকর্ড রয়েছে আমাদের হাতে। সেখানে তিনি তার ক্ষমতা অনন্য উচ্চতায় যাবার ইঙ্গিত দেন। এরপরই গত ১৭ মার্চ তিনি হয়ে বসেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। তবে তিনি সাধারণ সম্পাদক হবার আগে থেকেই বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ফেসবুক পেইজ থেকে নানা ধরনের উষ্কানীমূলক পোস্ট দিয়ে ধর্মীয় সম্প্রিতী নষ্ট করে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগ ুঠতে থাকে। অসমর্থিত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে , প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিত করার 'ধর্মীয় উষ্কানিমূলক' ফেসবুক পোস্টটি তার প্ল্যানেই পোস্ট করা হয়। এ ধরনের ঘটনা থেকে মূলত 'এসিড টেস্ট' করছিল সন্তোষ শর্মা ধর্মীয় উষ্কানির। এমনকি ফরিদপুরের ঘটনায় , মন্দিরে হামলা নিয়ে যত দ্রুত সন্তোষ শর্মারা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল তারচেয়ে দ্রুত গতিতে গায়েব হয়ে যায় যখন তারা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধাতে ব্যার্থ হয়। এছাড়াও যখন শ্রমিক হত্যা নিয়ে অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে তখন পুরো হারিয়েই যায় প্রতিক্রীয়াশীল ধর্মীয় এই সংগঠনগুলো। হারিয়ে গেলেও সন্তোষ শর্মা চুপ করে বসে থাকে না। অপেক্ষায় থাকে নতুন সুযোগের। অপেক্ষায় থাকে , কিভাবে দেশের ধর্মীয় শান্তি নষ্ট করা যায়। কিন্তু কোন সুযোগ না আসায় তিনিই 'অশান্তি' সৃষ্টির জন্য কাজ শুরু করেন। আর যার জন্য তিনি সাহায্য নেন, কালবেলার 'জাতীয় পার্টি বিট' করা রিপোর্টার রাজন ভট্টাচার্যের। জাতীয় পার্টি বিট করলেও এই প্রতিবেদকের রয়েছে ভারতীয় হাইকমিশনের সাথে গভীর সখ্যতা। যার প্রমাণ মেলে নিয়মিত তার সেখানে যাতায়াতের পাশাপাশি 'বিশেষ ম্যাগাজিনে' তার লেখা প্রকাশের মাধ্যমে। জাতীয় পার্টি এবং রেলের বিটে কাজ করা রাজন ভট্টাচার্য হুট করেই একটি প্রমাণিত ভূয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে দেশের ভেতর ধর্মীয় অশান্তি সৃষ্টি করার মত সংবাদ প্রকাশ করে। দৈনিক কালবেলার ৪ মে এর সংখ্যার প্রথম পাতায় "ধর্মান্তরকরণে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর নতুন মিশন!" শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে রাজন। যার পেছনের মাস্টারমাইন্ড 'ধর্মযুদ্ধ' লাগিয়ে দেশকে বিপদে ফেলতে চাওয়া সন্তোষ শর্মা বলে পত্রিকাটির একাধিক কর্মী নিশ্চিত করেছেন। তারা যেই তথ্যের উপর নির্ভর করে এই সংবাদটি প্রকাশ করে তা এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের কিছু বিজেপিপন্থী সোশ্যাল মিডিয়া পেইজের মাধ্যমে ছড়ানো হয় এবং এরপর ভারতে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয় বলে নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির। এছাড়াও শিশির আরও দাবি করেন, এএফপিসহ ভারতের শীর্ষস্থানীয় অনেক সংবাদমাধ্যম এবং ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা প্রমাণ করেছে যে, এটি ভুয়া ও বানোয়াট একটি বিজ্ঞপ্তি। এরপরও এই বানোয়াট তথ্যের উপর সংবাদ প্রকাশ নিয়ে বেশ খানিকটা অবাক হয়েছেন বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক এই সম্পাদক । এ বিষয়ে সাইকলোজিক্যাল ওয়ারফেয়ার সম্পর্কিত একাধিক গবেষক দাবি করেছেন, যেহেতু আগেই প্রমাণিত হয়েছে এটি একটি বানোয়াট তথ্য তবুও সেটাকে উপজীব্য করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে যা প্রমাণ করে খুব সুক্ষ্মভাবে একটি ধর্মীয় উষ্কানি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এমন উষ্কানি অনেক সময় বড় এবং ভয়ংকর রূপ নেয়। সেক্ষেত্রে এমন ঘটনা যাতে অপরাধীরা দ্বিতীয়বার ঘটানোর সুযোগ না পায় , সেজন্য রাষ্ট্রের এদের প্রতি বাড়তি নজর দেয়া দরকার। এদিকে সাবেক এক সামরিক কর্মকর্তা মনে করেন, বাংলাদেশ-চীন মহড়া নিয়ে ভারতের সাথে যে শীতল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সেখান থেকেই এমন কাজের পরিকল্পনা হতে পারে। কারণ এই মুহুর্তে দেশে যদি কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় , তাতে সরকার কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বে। আর তখন ভারত বাংলাদেশকে এই ইস্যুতে বিপাকে ফেলতে সক্ষম হবে। আর সেদিক থেকে এই দুই ব্যক্তির 'ভারত কানেকশন' বেশ কিছু জিনিস পরিষ্কার করে দিয়েছে। অপরদিকে কালবেলার 'ফান্ডিং' নিয়েও প্রথম থেকে বিতর্ক ছিল। সেই বিতর্কের জায়গা থেকেই প্রতিষ্ঠানটির অর্থদাতা বিশ্বাস গ্রুপের সম্পর্কে আমরা খোঁজ নিতে শুরু করি। এরপর দিল্লীর ট্রেড ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে বাংলাদেশের বিশ্বাস গ্রুপের ব্যবসায়িক সম্পর্কের প্রমাণ মেলে। ১৯৯৬ সালে ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয় ট্রেড ইন্ডিয়া কোম্পানি, যার প্রধান কার্যালয় দিল্লিতে। প্রতিষ্ঠানটির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সন্দীপ চ্যাটার্জি এবং বিকি খোশলা এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ট্রেড ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মি: বিকি খোশলাকে বিশ্বাস গ্রুপের সাথে তাদের যোগাযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, প্রথমে তিনি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। এরপর প্রমাণ দেখানো হলে যোগাযোগের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, বিশ্বাস গ্রুপ তাদের কোম্পানির মাধ্যমে গার্মেন্টস প্রোডাক্ট সহ অনেক কিছুই ট্রেড ইন্ডিয়ার মাধ্যমে বিক্রি করে। তাদের সাথে আর্থিক লেনদেন আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে, তিনি এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। এ বিষয়ে বিশ্বাস গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায় নি। বাংলাদেশের দৈনিক কালবেলা পত্রিকা বিশ্বাস গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন যার মালিক নজরুল ইসলাম বিশ্বাস। যিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একজন রাজনৈতিক নেতাও। মি: বিশ্বাসের কম সময়ে প্রচুর অবৈধ সম্পদ গড়ার তথ্য ও পাওয়া যায় সময়ের আলোর প্রকাশিত ২০১৯ সালের সংবাদে। ৯০ এর দশকে মি: বিশ্বাস বাংলাদেশের বর্ডার গার্ডেও চাকরি করতেন। তবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্যে তিনি সে চাকরি হারান এবং ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৯৫ সালের দিকে তিনি কন্সট্রাকশন ব্যবসার সাথে যুক্ত হন বলে একটি সংবাদ মাধ্যমের সাক্ষাৎকারে দাবি করেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে বলেও বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ হয়েছে
  • Previous Post

    মৃতপ্রায় চলচ্চিত্রাঙ্গনের ঘাড়ে সাংবাদিকদের ভূত!

Two Comments

আপনারও পছন্দ হতে পারে<

মতামত দিন