Statement

মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস কেলেংকারি!

প্রকাশ কুমার চট্টোপাধ্যায়: জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশে শিশু অধিকার নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সাংবাদিকদের মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস দিয়ে আসছে। এই পুরস্কারকে সাংবাদিকরা তাদের বড় অনুপ্রেরণা হিসেবেই দেখে থাকেন। এই অ্যাওয়ার্ড নিয়ে প্রতি বছরই দেশের সাংবাদিকদের মধ্যে একটা বাড়তি আগ্রহ থাকে। তবে বাতির নিচের অন্ধকারের মতই এবারের পুরিস্কার নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক এবং গুঞ্জন। যা চলছে এর আগের বছরের পুরস্কার বিতরণীর দিন থেকেই। মূলত বিষয়টা নজরে আসে আগেরবারের পুরস্কার বিতরণের অনুষ্ঠানের দিন। মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসের ১৭ তম আসরে নোমিনেশন পেয়েছে বলে আমন্ত্রণ জানানো হয় জাগো নিউজের একজন প্রতিবেদককে। দারুণ একটি প্রতিবেদন নিয়ে আশাবাদীও ছিলেন সেই রিপোর্টার। কিন্তু অনুষ্ঠানের দেখা যায় , তার প্রতিবেদনটি সেই নোমিনেশন তালিকা থেকেই কে বা কারা যেন সরিয়ে ফেলেছে! সেই প্রতিবেদক যখন এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তখন ইউনিসেফ মুখ খোলে। তারা দাবি করে কাজটি মূলত করে Mercari Asia Limited নামের একটি এজেন্সি। ঐ প্রতিবেদক আমাদের নিশ্চিত করেন, এই ঘটনার জন্য Mercari Asia Limited মেইল করে তার কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন। এই ঘটনা থেকেই প্রথমবারের মত সামনে আসে ফলাফল পরিবর্তন করে পুরস্কার জালিয়াতির ঘটনা। যেখানে ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় উঠে আসে একজন অনলাইন পত্রিকার সম্পাদকেরও নাম। এই ঘটোনাকে সামনে রেখে আমরা আগাতে থাকি। অপেক্ষা করতে থাকি এবারের পুরস্কার বিতরণের জন্য। আমরা প্রথমেই নজর দেই, আগেরবারের ওত বড় অন্যায়ের পরও ইউনিসেফ Mercari Asia Limited- কে দায়িত্ব দেয় কিনা। রিপোর্ট আহ্বানের পোস্টেই আমরা দেখতে পাই এবারও সেই বিতর্কিত এজেন্সিকেই দায়িত্ব দিয়েছে ইউনিসেফ। কারণ প্রতিবেদন আহ্বানের পোস্টের নিচেই দেয়া ছিল Mercari Asia Limited এর ইমেইল এড্রেস। এরপর আমরা নজর দেই বিচারকদের মার্কিং এর দিকে। আমরা জানতে পারি, একটি কোড বসিয়ে নাম ছাড়া প্রতিবেদন পাঠানো হয় বিচারকদের কাছে। এরপর তারা আলাদা আলাদাভাবে মার্কিং করে পাঠালে সব মার্কস একসাথে যোগ করে ফলাফল তৈরি করে Mercari Asia Limited. এই জায়গাতেই শুরু হয় আসল জালিয়াতি। প্রতিষ্ঠানটি কখনও অর্থ আবার কখনও সম্পর্কের বিনিময়ে ফলাফল পরিবর্তন করে দেন। এ বিষয়ে আমরা বিচারকদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করলেও তারা মুখ খুলতে চায়নি। যেখান থেকে আমাদের মনে হয়েছে, হয় বিচারকরা এর সাথে জড়িত অথবা তারা বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরে চুপ থাকাটাকেই 'শ্রেয়' বলে মনে করেছেন। এবার পুরস্কার জেতা একাধিক প্রতিবেদন নিয়ে আমরা যোগাযোগ করি বেশ কয়েক জন সংবাদ বিশ্লেষকের সাথে। সেখানে একটি 'প্রতিবেদনকে' এক বাক্যে সবাই দাবি করেছেন যে, এটা একটি এনজিও এর পিআর নিউজ ছিল, যেটা পুরস্কারের নোমিনেশনেই থাকার কথা না। একটি এনজিওকে প্রোমট করা সেই সংবাদটিই জিতে নিয়েছে পুরস্কার। এছাড়াও আরও একটি পুরস্কার পেয়েছেন একটি অনলাইন পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক, যেটার তথ্য এবং অন্যান্য বিষয় নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। খুব সাদামাটা এবং গাওজামিল ধরনের সেই প্রতিবেদনটিকেও দেয়া হয়েছে সম্মান। এর বাইরেও বেশ কয়েকটি নোমিনেশন এবং পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে এবারের আয়োজনে। অন্য সব বারের চেয়ে এবার বিতর্ক ছিল সবচেয়ে বেশি। বেশ কিছু সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম অভিযোগ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সাংবাদিক তুলেছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় সবগুলো কাজের সাথেই জড়িত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান Mercari Asia Limited. যে প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি আয়োজনকে তাদের নিজেদের স্বার্থ হিসেবে দেখেছে। তারা তাদের এবং দারাজের স্বার্থে একটি প্রতিষ্ঠানকেও বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র দাবি করেছেন। এই অনুসন্ধানের সময় ২০১৪ সালের একটি পুরস্কারের বিতর্কও সামনে আসে। সেবার অনুর্ধ্ব-১৮ ক্যাটাগরিতে যাকে পুরস্কার দেয়া হয়েছিল, তার প্রতিবেদনটি তার নিজের লেখা ছিল না। যেটা নিয়ে বিতর্ক হলেও কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই বিষয়টিকে ধামা-চাপা দেয়া হয়েছিল। এসব নিষয় নিয়ে যদিও ইউনিসেফ কিংবা তাদের বহুল আলোচিত থার্ড পার্টি Mercari Asia Limited - এর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
  • Previous Post

    কালো টাকায় গণমাধ্যমে সাদা এনআরবিসি ব্যাংক

Two Comments

আপনারও পছন্দ হতে পারে<

মতামত দিন