Statement

হোটেল পার্ল থেকে বৈশাখী নিউজরুম

আজাদ সিকদার: সাংবাদিকতা একটি মুক্তচিন্তার জায়গা আর নিউজরুম হল সেই মুক্তচিন্তার স্বর্গ। কিন্তু বৈশাখী টিভির নিউজরুমকে কিছু সংবাদকর্মীদের জন্য জাহান্নামে রূপ দিয়েছে বার্তা প্রধান অশোক চৌধুরী ও প্রধান বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলামের নির্যাতনে। অশোক-সাইফুলের কারণে এই গণমাধ্যমটি রূপ নিয়েছে আতঙ্কের নিউজরুম হিসেবে। বিশেষ করে আপোষ না করা নারী সাংবাদিকদের জন্য ভয়ংকর এক জায়গা এই নিউজরুমটি। অশোক-সাইফুলের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশের পর এদের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ আসতে শুরু করে। বেড় হয়ে আসতে শুরু করে তাদের সহযোগীদের নামও। আমরাও নামি অনুন্ধানে। বের হতে থাকে ভয়ংকর সব তথ্য। অশোক চৌধুরীর নিকেতনের আড্ডাখানার চেয়েও বড় আড্ডাখানা হল বনানীর পার্ল হোটেল। যদিও চার তারকা মানের এই হোটেলটির মালিকের নাম হিসেবে জানা যায় এএমএমএস লজিস্টিকসের মালিক মোহাম্মদ শফিকুল আলম জুয়েল। তবে এই জুয়েলের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক থাকায় শেয়ার কিনে নিয়েছেন উচ্চ আদালতের এক বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল, অশোক চৌধুরী ও পুলিশের কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এছাড়াও চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাও রয়েছে এই হোটেলের গোপন মালিকানায়। এই হোটেলটি দেশের জন্য বেশ ভয়ংকর একটি জায়গা। বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে এখানে। এখানে নিয়মিতই বসে নারী ও মদের আসর। পাশাপাশি সবচেয়ে ভয়ংকর যে তথ্যটি পাওয়া গেছে তা হল, প্রায় সময়ই এখানে একটি এম্বাসী থেকে শুরু করে একটি রাষ্ট্রের বেশ কিছু বিশেষ নাগরিকরা আসেন, যাদের সাথে হয় বিশেষ বৈঠক। এর বাইরেও বৈশাখী টিভির সত্ত্বাধীকারী ডেসটিনি গ্রুপ এর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন বিভিন্ন সময় সরকারের সাথে আপোষ করে বিভিন্ন সময় আপোষ করে বেড়িয়ে যেতে চাইলেও এই সিন্ডিকেটটি তাকে ভেতরে রাখতে সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। আর তাদের এসব কাজের প্রধান সহযোগী টেলিভিশনটির আদালত প্রতিনিধি । বৈশাখী টিভির আদলত বিট করা এই রিপোর্টারকে বিভিন্ন সময় রাতেও অশোক-সাইফুলের সাথে অ্যাটর্নি জেনারেলের বাসভবনে দেখা গেছে। এছাড়াও আদালত পাড়ায় অশোক-সাইফুলের দালাল হিসেবে সবধরনের কাজই করে থাকেন এই প্রতিনিধি। আমরা এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সেই প্রতিনিধি আমাদেরকে এড়িয়ে যায়। যা থেকে আমরা নিশ্চিত হই এসব অপকর্মে সহযোগীতা করেই তিনি তার চাকরি বাঁচিয়ে রেখেছেন। পার্ল হোটেলের সিন্ডিকেটের আরও অপকর্মের তথ্য আমরা পেয়ছি। বিভিন্ন রিপোর্টারদের দিয়ে সচিবালয়ে তদবির বাণিজ্য, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাণিজ্য এবং সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের মনোনয়ন বাণিজ্যও করে থাকেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বনানী ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন । গণভবন থেকে দুলাল খান নামে একজনকে কাউন্সিলর হিসেবে নোমিনেশন দেওয়া হয়। সেটাকে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার মাধ্যমে তদবির বাণিজ্য করে পার্ল হোটেলের সিন্ডিকেটরা নাসির এর নাম পাকাপোক্ত করে। এই হোটেলেই নিয়মিত যাতায়াত করেন বেশ কয়েকজন প্রেজেন্টার। শুধু এখানে না মাঝেমধ্যে বিভিন্ন জনের বাসাতেও যেতে বাধ্য করা হয় এসকল প্রেযন্টারদের। যাদের মাধ্যমেই মূলত বিভিন্ন কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্রটি। যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে সাংবাদিকতার মুখোশ পড়ে থাকা ভয়ংকর অশোক চৌধুরী। পছন্দের প্রেজেন্টপ্রপদের বিষয় উঠে আসলে আমরা নতুন করে অনুসন্ধান শুরু করি। যেখানে উঠে আসে আরও চাঞ্চল্যকর সব তথ্য । পছন্দের প্রেজেন্টার বুঝতে গিয়ে আমরা নজর দেই গত কিছুদিনের প্রাইম টাইম বুলেটিনের দিকে। দুপুর এবং সন্ধ্যার প্রাইম নিউজে যেসকল প্রেজেন্টারদের দেয়া হয় তারা বেশিরভাগই ফ্রেসার কিংবা এখনও কাজ শিখছে। বাংলাদেশের অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী সাধারণত একটু সিনিয়র এবং কাজে অভিজ্ঞ এমন প্রেজেন্টারদের এই সংবাদগুলো দেয়া হয়। সেখানে কেন এমন ফ্রেসার এবং কাজ শিখছে তাদের দেয়া হচ্ছে- খুঁজতে গিয়ে জানতে পারি এরা এসেছেই আগে থেকে অশোক-সাইফুলের মন জুগিয়ে। আমাদের এই অনুসন্ধানে বেশ কয়েকজন উঠতি প্রেজেন্টারদের নাম বেড়িয়ে এসেছে। এরাই মূলত পার্ল হোটেলের নিয়মিত সেই সকল প্রেজেন্টার। একাধিক নিউজ প্রেজেন্টার নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদেরকে এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। বিভিন্ন সময় এসব নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে তাদের নানা কৌশোলের অবলম্বন করতে হয় বলেও অভিযোগ করেছেন। কারণ অশোক-সাইফুলের আবদার রক্ষা না করলে নেমে আসে নানা ধরনের মানসিক নির্যাতন। আবার কেউ কেউ এদের হাত থেকে রক্ষা পেতে চাকরির সাথে সাথে দেশ ছাড়তেও বাধ্য হয়েছে। অশোক-সাইফুল গং নিয়ে আমাদের আরও দুইটি পর্ব রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে তা প্রকাশিত হবে।
  • Previous Post

    'পলাতক' নাকি 'সেইফ প্যাসেজ' নিয়েছেন অশোক চৌধুরী!

Two Comments

আপনারও পছন্দ হতে পারে<

মতামত দিন