Social

বাংলাদেশের মিডিয়া ধ্বংসের 'মাস্টারমাইন্ড' মেজর

স্বাধীণতা সাংবাদিক ফোরামের টাকার উৎস আমরা খুঁজতে গিয়ে , কেঁচো খুড়তে সাপের সন্ধান পাওয়ার মত অবস্থা হয়েছে। আমরা যখন জানি টাকা আসে চৌধুরী নাফিজ শারাফাতের পদ্মা ব্যাংক থেকে তখন আরও একটু অনুসন্ধান শুরু করি। বোঝার চেষ্টা করি , এখান থেকেই কেন টাকা আসতো। তখন আমাদের সামনে আসে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আফিজুর রহমানের নাম। মিলিটারি গোয়েন্দার এই "ধূর্ত" কর্মকর্তার দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশের মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের। ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তিনি 'আর্লি রিটায়েরমেন্টের' আগ পর্যন্ত ৮ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে যাচ্ছেতাইভাবে সরকারের পক্ষে ব্যবহার করেছেন। আমরা আফিজুর রহমান সম্পর্কে জানতে সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করি। যারা মূলত জানতেন কিভাবে এই সেনা কর্মকর্তা সবকিছু করতেন। শিক্ষা কোর থেকে সেনা গোয়েন্দাতে আসা এই আফিজুর রহমানের প্রধান কাজ ছিল সব গণমাধ্যমে ফোন দিয়ে সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া। এর পাশাপাশি তিনি নিজেও বেশকিছু ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ চালাতেন। এরমধ্যে একটি পেইজ সম্পর্কে আমাদের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক নিশ্চিত করেছেন। পেইজটির নাম ছিল, আমার নেত্রী, আমার অহংকার। ফেসবুক থেকে পেইজটি এখন মুছে ফেলা হয়েছে। এই পেইজে সরকারের পক্ষের বিভিন্ন নিউজ তিনি প্রচার করতেন। কোন চ্যানেল যদি সেখানে কপিরাইট দিতেন তাহলে সেই চ্যানেলের আওয়ামী লীগ, পিএম বিট করা অথবা সিনিয়র সাংবাদিকদের ফোন দিয়ে তুলে নিতে বলতেন। এই কাজ তিনি আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল পেইজ থেকে শুরু করে সব পেইজের জন্যই করতেন। এরপর আফিজুর তার আসল খেলা শুরু করে, সাংবাদিক সংগঠনগুলোড় নির্বাচনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে। তার বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি থেকে শুরু করে অন্তত দশটি সাংবাদিক সংগঠনের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির একটি নির্বাচনের এক প্রার্থী কারওয়ান বাজার এলাকায় প্রচারণায় গেলে তাকে ডিজিএফআইয়ের লোকজন দিয়ে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়েও দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রার্থী। এর বাইরে নির্বাচনে ফল ঘুরিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে প্রার্থীকে তুলে নিয়ে ভয় দেখানো সব অভিযোগই ছিল এই 'মিডিয়ার মেজরের' বিরুদ্ধে। এরপর আফিজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের আন্দোলনকে দমিয়ে দেয়ার অভিযোগও আছে। আবার আন্দোলনকে ব্যবহার করে পদ-পদবী বদলের মত ঘটোনাও আছে। যার বড় উদাহরণ পাওয়া যায় এসএ টিভির আন্দোলনের সময়। এর বাইরে একাধিক সাংবাদিক নেতা তার থেকে আর্থিক সুবিধা পেতো বলেও জানা গেছে। এর বাইরেও বিভিন্ন সময় আওয়ামী ঘরনার সাংবাদিকদের উপরও তিনি খবরদারি করতেন। যা নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়ে আওয়ামী ঘরনার সিনিয়র সাংবাদিকদের মধ্যে। যেই ক্ষোভ সামাল দিতেই ২০২২ সালে আট বছরেরও বেশি সময় পর এই মেজরকে ঘাটাইলের ক্যান্টরমেন্ট পবালিক স্কুল এন্ড কলেজে বদলি করা হয়। কিন্তু মিডিয়ার 'প্রেম' ভুলতে না পারা আফিজ আর্লি রিটায়ারমেন্টে যান। আর শুরু করেন মিডিয়া নিয়ে তার নতুন মিশন। তিনি অর্থ পাচারকারী ও ব্যাংক লুটেরা নাফীজ শারাফাতের নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলার নির্বাহী পরিচালক পোস্টে বসেন । সেখানে বসেই তিনি নাফীজকে দেখান কিভাবে মিডিয়া ব্যবহার করে কালো টাকা সাদা করা যায়। এছাড়াও আফিজুরের প্ল্যানেই নাফীজ দখল করেন সিটজেন টিভি। পাশপাশি এখানে বসেই ছক আঁকা হয় , 'স্বাধীনতা সাংবাদিক ফোরামের'। আর যে কারণে এই সংগঠনের সংগঠক ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের এক নেতা পদ্মা ব্যাংকের মাধ্যমে সংগঠনের টাকা তুলতেন। এই সংগঠনের জন্য আফিজুর আরেক সহযোগী ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ। এখানকার মিশন শেষ করে আফিজুর হাজির হয়েছেন বর্তমানে গ্লোব জনকন্ঠ শিল্প পরিবারে। এখানকার গণমাধ্যমের 'শেষ কথা' তিনি। তার নির্দেশনাতেই চলছে গ্লোবের গণমাধ্যম। খুব একটা নিজের পরিচয় মেলে না ধরলেও অনেকেই তার ভেতরের অবস্থান বুঝতে পেরেছেন। উদাহরণ হিসেবে ঐ প্রতিষ্ঠানের একজন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে হাসিনাকে নিয়ে করা বেশ কয়েকতা সংবাদে সে বারবার 'বাঁধা' দিয়েছে প্রকাশ না করার জন্য। এর বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় তিনি নিজেকে বঙ্গবন্ধু গবেষক হিসেবে দাবি করলেও, কোথায় তিনি এই গবেষণা করছেন তা জানা যায় না। আওয়ামী লীগ ও সেনাবাহিনীর এই প্রোপাগান্ডা অফিসারকে নিয়মিত দেশ-বিদেশে সরকার দলীয় প্রোগ্রামে থাকতেও দেখা যেত। এছাড়াও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, নির্বাচনী প্রচারনার জন্য সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১৫০ কোটি টাকা সিনিয়র সাংবাদিকদের দেয়া হয়েছে। যার দায়িত্বে ছিলেন মিলিটারি সেক্রেটারি কবির আহমেদ। এই সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগের প্রাথমিকভাবে দায়িত্বে ছিলেন মেজর আফিজুর রহমান৷ যদিও পরে সেটার ক্ষমতা চলে যায় ফারজানা রুপা এবং শাকিলদের হাতে। যা নিয়ে থাকবে আমাদের আরও একটি পর্ব ।  
  • Previous Post

    বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ভারতীয় 'বিশেষ সংস্থার' অলিখিত চেইন

Two Comments

আপনারও পছন্দ হতে পারে<

বৈছাআ সংশ্লিষ্ট পোস্ট সরাতে সাংবাদিককে হুমকি

প্রায়ই সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা গণমাধ্যম নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন।

সাকিবের বিপক্ষে পোস্ট দেয়ায় হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ

আওয়ামী লীগ থেকে ‘নির্বাচিত’ এমপি সাকিবকে খেলতে দেয়নি গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা জনতা

মতামত দিন