Investigation

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ভারতীয় 'বিশেষ সংস্থার' অলিখিত চেইন

তরিক্যার্ট লিভাররাইট: দেখতে যতখানি সাদাসিধে, ব্যবহার আর কাজে তিনি ততটুকুই জটিল—এমন অভিযোগ রয়েছে এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। দৈনিক জনকন্ঠে চাকরি হয় এডিটরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে। তবে এই চাকরির জন্য জনকণ্ঠ কতৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার! তিনি শুধু নিজে সুপারিশ করেই থেমে যাননি, আরো দুজনকে সুপারিশ করতে বলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুপারিশকারীদের একজন বাংলাদেশ মিডিয়া মনিটরকে সেটা নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে ঐ ব্যক্তি রামেন্দু মজুমদারের বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, আসলে রামেন্দু দাদা ভারতীয় একটি বিশেষ সংস্থার লোক বলেই আমরা জানি। সেটা সে আমাদের কাছে কখনও লুকানোর চেষ্টাও করে নাই। তার কথা না শুনে উপায় নেই। যে সাংবাদিকদের জন্য রামেন্দু মজুমদারের এই ‘ভালোবাসা’, তার নাম সিরাজুল এহসান। বর্তমানে কাজ করছেন নতুন পত্রিকা দৈনিক রুপালী বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর হিসেবে। এর আগে তিনি কাজ করেছেন পদ্মা ব্যাংকের টাকা পাচাকারী নাফিস শারাফাতের মালিকানাধীন দৈনিক বাংলায়। সেখানে তার পদবী ছিল এডিটরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট। সেখানেও রামেন্দু মজুমদার তার জন্য সুপারিশ করেছিলেন। এ ছাড়া ‘মুজিব বর্ষে’র কাজেও তিনি যুক্ত ছিলেন। ‘মুজিব বর্ষে’ কী পরিমাণ টাকা লুটপাট হয়েছে তা বলাই বাহুল্য ! বিটিভিতেও বিভিন্ন কাজ করেছেন এই সাংবাদিক। আর সব কিছুতেই তার পেছনে রয়েছেন তার ‘রামেন্দু দাদা’। এরপরে এমন আরেক জন অনিল সেন। বর্তমানে রুপালী বাংলাদেশে নিউজ এডিটর হিসেবে কাজ করছেন। এ পত্রিকায় তার চাকরি হওয়ার পেছনে রয়েছেন প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। এই শ্যামল দত্তের নামেও অনেক অভিযোগের মধ্যে একটি সাধারণ অভিযোগ হচ্ছে, তিনি ভারতীয় সংস্থার হয়ে তথ্য সংগ্রহ ও পাচার করেন । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন দাবিও করেছেন, অনিল সেন নিজেও ভারতীয় সংস্থার লোক। দৈনিক রুপালী বাংলাদেশে যোগ দেওয়ার আগে অনিল দুই বছর নিউজ এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন দৈনিক ভোরের আকাশে। সেখানেও অভিযোগ রয়েছে, তার ‘ভারতীয় নীতির’ সাথে সমন্বয় না করতে পেরে তাকে নিয়োগ দেওয়া সম্পাদকই চাকরি ছেড়ে চলে যান। পরে সেখানে তিনি সম্পাদক হিসেবে নিয়ে আসেন একুশে পদক প্রাপ্ত সংগীতজ্ঞ মনোরঞ্জন ঘোষালকে। এই মনোরঞ্জন ঘোষালের নামেও অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় সংস্থার হয়ে কাজ করার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংবাদকর্মী বলেন, তাদের বিষয়ে মুখ খোলা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ঢাকার গণমাধ্যমে কম-বেশি সবাই এদের ভারতীয় সংস্থার লোক হিসেবেই জানে। আর তারা এখনও নিজ নিজ জায়গাও ধরে রেখেছেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের সাথে সাথেই মনোরঞ্জন ঘোষালও দৈনিক ভোরের আকাশ থেকে চলে গেছেন। যাওয়ার আগে তিনি নিয়ে আসেন তার পালক পুত্র হিসেবে পরিচিত শিপংকর শীল নামের এক সাংবাদিককে। এই শিপংকর শীল এখন দৈনিক ভোরের আকাশের সচিবালয়ে বিটে কাজ করছেন। অথচ ঠিক মতো একটি প্রতিবেদন গুছিয়ে লেখার সামর্থ্য তার নেই বলেও তার সহকর্মীরা জানিয়েছে। একই অভিযোগ করেছে তার সহপাঠীরাও। শিপংকর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপকমিটির সদস্য। এই শিপংকরের মাথার ওপর স্নেহের পরশ পাথর হিসেবে রয়েছে কালবেলা সম্পাদক শন্তোষ শর্মার হাতও, যার নামেও রয়েছে একাধিক অভিযোগ। তিনি ভারতীয় সংস্থার প্রেসক্রিপশনে চলেন বলে অনেকেই বলে থাকেন। এমনকি তার ভারত সম্পৃক্ততার অডিও-ছবিও রয়েছে আমাদের হাতে। সন্তোষ শর্মার কালবেলায় জ্যেষ্ঠ হিসেবে ১০ দিন আগেও কাজ করতেন রাজন ভট্টাচার্য, যার নামে দেশে গুজব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে, যা ‘মিডিয়া মনিটেরে’ প্রকাশ করা হয়েছে।‌ এই রাজন ভট্টাচার্য কালবেলায় যোগ দেওয়ার আগে ছিলেন দৈনিক ভোরের আকাশে। আর সেখানে তাকে নিয়ে আসেন অনিল সেন। আর ভোরের আকাশে যোগ দেওয়ার আগে রাজন কাজ করতেন দৈনিক জনকণ্ঠে। সেপ্টেম্বর থেকে রাজন ভট্টাচার্য তার নতুন মিশন শুরু করেছেন অন্য কোনো গণমাধ্যমে। রাজনের ওপরে রয়েছেন সাংবাদিক আশিষ কুমার দে, যিনি দৈনিক ভোরের আকাশে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। এই আশিষ আবার নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়াও রাজনের নামে জাতীয় পার্টির পরিবহন নেতাদের থেকে মাসেহারা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। রাজন ভট্টাচার্য্যও নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটিরও সদস্য। অন্যদিকে সিরাজুল এহসান, অনিল সেন, শিপংকর শীল, রাজন ভট্টাচার্য্য —তারা সবাই ভারতীয় ওই বিশেষ সংস্থার নির্দেশে প্রেস ক্লাবের নির্বাচনে শ্যামল দত্তের হয়ে কাজ করেছেন। এ জন্য তারা শ্যামল দত্ত ও ভারতীয় সংস্থা — দুই জায়গা থেকেই আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এদের সবার আশির্বাদে শ্যামল দত্ত প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ যেন এক অলিখিত দৃশ্যমান চেইন, যার গোঁড়ায় রয়েছে ভারতীয় ওই বিশেষ সংস্থা। প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হয়, কিন্তু ব্যক্তি আর তাদের কাজ অভিন্ন থেকে যায়। সেখানে সিরাজুল এহসান, অনিল সেন, রাজন ভট্টাচার্য্য, শিপংকর শীল, আশিষ কুমার দেরা ঘুরে-ফিরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সওয়ার হন। এদের বেশিরভাগের নতুন ঠিকানা হিসেবে দেখা গেছে 'ভাইয়া গ্রুপ' নামে একটি প্রতিষ্ঠানের দৈনিক রুপালী বাংলাদেশ। যে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, গোয়েন্দা অর্থায়নে পরিচালিত হবার। আমরা সে বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের গেস্ট লিস্ট দেখি। ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে উদ্বোধন হওয়া এই পত্রিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ডিজিএফআই এর পরিচালক (মিডিয়া উইং) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মো. কামরুজ্জামান, ডিজিএফআই’র সিনিয়র এডিশনাল ডিরেক্টর (মিডিয়া উইং) ওবায়েদ রহমান, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) এর মুখপাত্র ও আইন গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন, টুরিস্ট পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মনিরুজ্জামান টুকু, এসবির এডিশনাল ডিআইজি আশিকুল হক ভুইয়া (ইমিগ্রেশন ল্যান্ড এ্যান্ড সি), সিআইডির এডিশনাল ডিআইজি মো. রেজাউল মাসুদ (সাইবার এ্যান্ড ক্রাইম মনিটরিং সেল), হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শ্যামল কুমার মুখার্জি এবং টুরিস্ট পুলিশের এডিশনাল এসপি নাদিয়া ফারজানা। এই পুরো চেইনের আর্থিক উৎস খুঁজতে গিয়ে সামনে আসে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) নাম। এডিবির রেফারেন্সে বিভিন্ন সরকারি পদে নিয়োগ, বদলি, সরকারি কন্ট্রাক্ট ইত্যাদি বাণিজ্যে এই সাংবাদিকরা অর্থ ও ক্ষমতার মালিক হয়ে ওঠে। এডিবির সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশের হাত ধরেই আসতো তাদের ফান্ডিং। যার পেছনে ছিলেনে আরেক ব্যক্তি ও একটি হাই কমিশন। যা নিয়ে আমাদের আলাদা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হবে।
  • Previous Post

    গোয়েন্দা সহয়তায় চলতো স্বাধীনতা সাংবাদিক ফোরাম

Two Comments

আপনারও পছন্দ হতে পারে<

হাসিনার ইস্যু মেকার চ্যানেল ২৪ এর ইমরান

কে এই আব্দুল্লাহ আল ইমরান? হাসিনার বাবাকে নিজ হাতে গুলি করা নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে ফেরত আনার গুরুদায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নেওয়া ব্যক্তিই আব্দুল্লাহ আল ইমরান।

মতামত দিন